আওয়ামী লীগের সউদি পদলেহনের শিকার পরিবেশ আন্দোলনকর্মী মোহন কুমার মন্ডল

by | Sep 26, 2015 | ব্লগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ নিয়ে সবাই চিন্তিত ও ক্রুদ্ধ। সবাই জামাতে ইসলামী, বিনপির সরাসরি ধর্মবাজী কিংবা রাজাকার পুনর্বাসন নিয়ে উচ্চকিত হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে জামাতী অনুপ্রবেশ নিয়ে যথেষ্ট নমুনার অভাব ছিলো। আজকে সে অভাব পূরণ হয়েছে।

পরিবেশ সুরক্ষার পুরষ্কার নিতে যখন আমাদের শেখ হাসিনা আমেরিকায় বেড়াচ্ছেন, তখন এই বাংলাদেশেই পরিবেশ আন্দোলনের একজন নিবেদিত কর্মী নিগৃহীত হয়েছেন, সেকুলার বাংলাদেশে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেবার কাল্পনিক অভিযোগে।

 

মোহন কুমার মন্ডল বাংলাদেশে একটা পরিবেশ সুরক্ষা এনজিও নিয়ে গত প্রায় আঠারো বছর যাবৎ কাজ করছেন। লীডারস নামের এই সংস্থা এ বছরই বিশ্ব পানি সংরক্ষণ সন্মেলনে পুরষ্কারও অর্জন করে। উপরের ছবি এবং ভিডিও দেখলে, তার ফেসবুক, এবং তাদের এনজিওর সাইট ঘুরে দেখলে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভেঙ্গে পড়া আশা আবার জেগে ওঠার সম্ভাবনা দেখতে পাই। 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের পরিবেশ সংরক্ষণের বিশেষ পুরষ্কার জয় করেছেন, তার এই অর্জনের মাঠ পর্যায়ের কাজগুলি সরকারী সংস্থা বাদে, এধরনের এনজিওরাই করে থাকেন।

আমরা ভালো করেই জানি এনজিওগুলির ওপর সরকারী বাহিনী প্রায়ই ক্ষেপা থাকে, বিশেষ করে ইসলামী মোল্লাতন্ত্র এনজিওদের বিষয়ে প্রায়শই বিষোদগার করতে দেখা যায়। উপরে একটা ছবিতে দেখুন, মোহনের সংস্থা স্কুলগুলির ‌’বিজ্ঞাণ ক্লাব‌’ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই এই বিজ্ঞাণ মনষ্ক ছাত্র ছাত্রীরা চিন্তাশীল এবং ধর্মীয় কুসংস্কার প্রসারের পথে বাধা।  

 

আমরা সবাই দেখেছি গতকাল সৌদিআরবে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যাবস্থাপনার শিকার হয়ে প্রায় পনেরোশ হজ্ব যাত্রী মৃত্যুবরণ করেছে। আমার সবাই এই সউদি ধর্মীয় ব্যবসার ধরন সম্পর্কে জানি, প্রতিবছর প্রায় বিশ লাখ মানুষ কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ অপচয় করে সউদি আরবে যায়। সউদি আরব এ থেকে বছরে সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার কামাই করে। এ নিয়ে আমরা সবাই ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি আম্লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লতিফ সিদ্দিকী এ নিয়ে কিছু সত্য কথা বলায় তাকে ছয় মাসের জেল বরন করতে হয়, পরবর্তীতে পদচ্যুত হতে হয়। এ থেকে পরিষ্কার, বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম ব্যাবসার সবচেয়ে বড়ো বানিজ্য, মানে হজ্জ নিয়ে কোন সত্য কথন বিনা শাস্তিতে যেতে দেয়া হয় না।

 

আজ আমরা জানতে পারলাম, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগন্জ ইউনিয়নের মোহন কুমার, আমাদের সবার মতোই, সউদি গাফিলতিতে মানুষের মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং উল্লেখ করেন, যদি শয়তানকে পাথর মারা গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে আমাদের আশেপাশের শয়তানদের দিকে মনযোগ নেই কেন কারো?

 

আধাঘন্টার মধ্যেই ফেসবুকে তার এই পোস্টটি তিনি সরিয়ে নেন। কিন্তু ওই পোস্টের জের ধরে, অসীম মৃধা নামক একজন স্থানীয় চেয়ারম্যান লোক লাগিয়ে তাকে প্রহারের উদ্দেশ্যে লীডার্সের অফিসে যায়, মোহন ওই সময় উপস্থিত না থাকায় মোহনের ভাই অসিত শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত হয় চেয়ারম্যানের গুন্ডাদের হাতে। এরা সবাই আওয়ামী।

 

আকবর কবীর - মামলার বাদী
সাংসদ এস এম জগলুল হায়দার, আকবর এর গডফাদার

উপরে বাম দিকের ছবিতে আকবর কবীর নামক স্থানীয় একজন আওয়ামী নেতা, এবং স্থানীয় প্রেসক্লাবের প্রধান। এই ব্যাক্তি আজকে নিজে বাদী হয়ে মোহনের নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলা করেছে। ডানদিকের ছবিটি তার গডফাদার সাংসদ জগলুল হায়দারের। 

সাংসদ জগলুল হায়দারের ডান হাত, দুর্নীতিবাজ এই আকবর কবীর, অতীতে গম বিতরনে লুটপাটের কারনে তাকে কিছুদিন সরিয়ে রাখা হলেও জগলুল এমপির প্রশ্রয়ে পুনরায় প্রকাশ্যে ক্ষমতা দেখানো শুরু করে।

 

আকবর কবীর দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খানের ঘনিষ্ট হিসেবেও পরিচিত। সুন্দরবনের মধু ও সাতক্ষীরার মাছ সে নিয়মিত উপঢৌকন হিসেবে পাঠাতো আবেদ খানের কাছে। আবেদ খানের সময় সে কালের কণ্ঠের সাংবাদিক হয়েছে বলে জানা যায়।

 

আকবর কবীরের ইতিহাস আরও মজার। শ্যামনগরের নকিপুর হাইস্কুলে পড়ার সময় সে ছিল ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা। পরবর্তী জীবনে সে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বিএনপি করতো। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সে জগলুল হায়দারের পক্ষে প্রচারে অংশ নেয় এবং ২০১০ সালের আগে বা পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়।

 

আরও মজার ঘটনা হল, পারিবারিকভাবেই আকবর কবীর মৌলবাদের ধারকবাহক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা মামলা বক্স ছিল শ্যামনগর শান্তি কমিটির সদস্য।

 

উপরের পুরো ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান বাংলাদেশের সেকুলার ভাবমূর্তী ধ্বংসে এই ক্ষমতালোভী সাংসদ বর্গ, এবং তাদের পদলেহী জামাতী অনুপ্রবেশকারীরাই সবচেয়ে বেশী এগিয়ে। 

দুর্নীতি, লুটপাটে মোহনের অনুমিত প্রতিবাদ, এবং বিশ বছর ধরে সাতক্ষীরা জেলায় পরিবেশ ও পানি উন্নয়ন নিয়ে মোহনের এনজিও কর্মকান্ডে যে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ঘটছিলো, তাতে হয়তো জামাতী অনুপ্রবেশকারীদের ক্ষমতা প্রয়োগে বাধা আসছিলো। 

৫৭ ধারা এমন একটি কুৎসিত অপ-আইন, যাতে সত্যিকার কোন অপরাধ ছাড়াই, কাল্পনিক অযুহাতে কাউকে বন্দী করে ফেলা যায়। আজকে আমাদের চোখের সামনে এই ঘটনাটিই ঘটলো। রাজনীতি কিভাবে স্থানীয় যুবকদের দমন করতে ধর্মানুভূতি নামক উদ্ভট তত্ব অপ-ব্যবহার করে, তার নজির আমরা দেখলাম। 

 

মোহনের মামলা খারিজ করে, তাকে এখনি মুক্তি দেয়া হৌক। 

সাংসদ জগলুলকে আকবরের সাথে সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হৌক। 

 

সর্বোপরি, ৫৭ ধারা বাতিল হৌক।